Monday 1 May 2023

আমার মন কি বাত প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই, সেই সুযোগ পাইনি,তাই এই উত্তরীয় আমি প্রত্যাখ্যান করছি!

সাহিদুলের মন কি বাত শুনলেন না মোদিজি। সাহিদুল প্রত্যাখ্যান করলেন রাজ্যপালের দেওয়া সন্মান এবং উত্তরীয়। কে সাহিদুল?

 অনেকেই জানেন, অনেকেই জানেন না, তাই একটু পরিচয় দেওয়া যাক, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার পুরি গ্রামের বাসিন্দা সাহিদুল পেশায় ট্যাক্সি ড্রাইভার। তিনটে ট্যাক্সি ছিল, তিনি প্রায় বিনা চিকিৎসায় তাঁর বোনের মারা যাওয়ার পরে একটা হাসপাতাল তৈরি করেছেন। তিনটে ট্যাক্সির মধ্যে দুটো বেচে দিয়েছেন, নিজের আয়ের পয়সা ঢেলেছেন, আরও কিছু মানুষজন এগিয়ে এসেছেন, হাসপাতালের আউটডোরের কাজ শুরু হয়েছে। সেই সাহিদুল লস্কর গতকাল আমন্ত্রিত ছিলেন রাজভবনে। নরেন্দ্রভাই দামোদরদাস মোদিজির মন কি বাত অনুষ্ঠানের ১০০তম পর্ব প্রচারিত হবে সেই উপলক্ষে সাহিদুল ইসলাম, রুদ্রনীল ঘোষ সহ আরও কিছু মানুষ হাজির ছিলেন রাজভবনে। তাঁদের সম্বর্ধনা দেওয়া হবে, রাজ্যপাল নিজে পরিয়ে দেবেন উত্তরীয়। সেই অনুষ্ঠানে রুদ্রনীল ঘোষের চোখের সামনেই সাহিদুল দেখালেন তাঁর রিড় কি হাড্ডি, তাঁর শিরদাঁড়া। তিনি বললেন, আমিও আমার মন কি বাত প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই, সেই সুযোগ পাইনি তাই এই উত্তরীয় আমি প্রত্যাখ্যান করছি।

দৃশ্যটা ভাবুন, রাজ্যপাল মঞ্চে, সাহিদুল লস্করের নাম ডাকা হয়েছে, তিনি মঞ্চে উঠেছেন। রাজ্যপাল উত্তরীয় পরাতে গেলেন, সাহিদুল হাতজোড় করে তা প্রত্যাখ্যান করলেন। শুধু তাই নয়, খোলা গলাতেই জানালেন, তাঁকে দু’ দু’ বার উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে দিল্লিতে, একবারও তিনি সুযোগই পাননি মন কি বাত মোদিজিকে বলার। কেবল আমলারা তাঁর এই হাসপাতাল তৈরির ইচ্ছে নোটপ্যাডে টুকে নিয়েছেন, মোদিজি সেই লিখিত স্ক্রিপ্ট পড়ে দিয়েছেন, কিন্তু ওয়ান ওয়ে কমিউনিকেশনে বিশ্বাসী মোদিজির সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই সাহিদুল লস্করের কথা হয়নি। তিনি ভেবেছিলেন অন্তত ১০০তম এই অনুষ্ঠানে তিনি তাঁর মন কি বাত খুলে বলতে পারবেন, এখানেও সেই সুযোগ নেই দেখে তিনি হাতজোড় করে রাজ্যপালকে জানান তিনি এই উত্তরীয় প্রত্যাখ্যান করছেন, তিনি খালি গলাতেই সেই কথা উপস্থিত দর্শকদের জানান। 

সাহিদুল যখন তাঁর শিরদাঁড়া সোজা করে প্রতিবাদে শামিল, তখন জানতে মন চায় আমাদের সাতে পাঁচে নেই দাদা রুদ্রনীল ঘোষ তাঁর হারিয়ে যাওয়া শিরদাঁড়ার কথাই কি ভাবছিলেন? কারণ অনুষ্ঠানের আগেই রুদ্রনীল কোট আনকোট যশস্বী প্রধানমন্ত্রীর এই ১০০তম মন কি বাতের যে বিরাট সফলতা তা নিয়ে আমাদেরও বাইট দিয়েছেন। আচ্ছা বিরাট সফল এই মন কি বাত দেখেছেন ক’জন? শততম অনুষ্ঠান যাতে মানুষ দেখেন তার জন্য বিজেপির সর্বোচ্চ নেতৃত্ব নির্দেশ জারি করেছিলেন, সর্বত্র এই অনুষ্ঠান মানুষকে শোনাতে হবে। না, সেরকম কোনও প্রচেষ্টা আমাদের চোখে পড়েনি, একমাত্র রাজভবনে এক বিরাট আয়োজন করা হয়েছিল, যাকে আমাদের রাজ্যপাল বলেছেন অমৃতকালে অমৃত বচন। মানে আমরা যে সময়ে আছি সেটা অমৃতকাল আর ১০০তম মন কি বাত-এ মোদিজি যা বলেছেন তা হল অমৃত।

আসছি সে আলোচনাতেও। ১০০তম মন কি বাত আবার কেবল ভারতীয় ২২টা ভাষাতেই নয়, ফরাসি, চিনা, ইন্দোনেশিয়ান, টিবেটান, বার্মিজ, বালুচি, আরবি, পশতু, পারসিয়ান, দারি এবং সোয়াহিলি ভাষাতেও অনুবাদ করে প্রচার করা হয়েছে। এই ১০০তম অনুষ্ঠান ক’জন শুনল তার সঠিক হিসেব আমাদের কাছে নেই, নিশ্চয়ই পরে তা পাওয়া যাবে। কালকেরটা বাদই দিলাম, এমনিতে এই অনুষ্ঠান দেখে ক’জন সেটা নিয়ে কটা কথা বলে নিই। 

সেন্টার ফর স্টাডি অফ ডেভেলপিং সোসাইটি (এসএসডিএস)-এর এক রিপোর্টে বেরিয়ে এসেছে সেই তথ্য। তাতে বলা হচ্ছে দেশের পাঁচ ভাগ জনতার তিন ভাগ মানুষ ১০০ এপিসোডের একটা এপিসোডও কোনওদিন শোনেননি। মানে ১৪০ কোটি মানুষের ৮৪ কোটি মানুষ একদিনের জন্যও শোনেননি। দেশকে পাঁচটা ভাগ করে এই সমীক্ষা চালানো হয়েছিল, তার মধ্যে দক্ষিণ ভারতে জনসংখ্যার ৭৫ ভাগ মানুষ একদিনও শোনেননি এই অনুষ্ঠান, উত্তর পশ্চিম ভারত, এমনকী পূর্ব ভারতেও ৬০ ভাগের কিছু বেশি মানুষ একদিনের জন্যও এই অনুষ্ঠান শোনেননি। এমনকী উত্তর ভারত বা পশ্চিম ভারতেও ৫০ শতাংশ মানুষ একদিনের জন্যও এই অনুষ্ঠান শোনেনি।


No comments:

Post a Comment

তৃণমূল করার অপরাধে শুভেন্দুর বিধানসভায় নন্দীগ্রামের ভেকুটিয়ায় পানীয় জল বন্ধের প্রতিবাদে রাস্তায় ধরনা মহিলাদের

তাদের একমাত্র অপরাধ একুশের বিধানসভা  (Nandigram Assembly Election 2021 ) নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে ভোট দিয়েছিলেন। এ...